পাউবো’র বাঁধরক্ষা ও হাওরে বীজধান রোপণ ব্যাহত হওয়া প্রসঙ্গে
- আপলোড সময় : ০৬-১২-২০২৪ ০৯:৩৯:০৪ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৬-১২-২০২৪ ০৯:৩৯:০৪ পূর্বাহ্ন
গত বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ) গণমাধ্যমে ‘বীজ ধান রোপণ করতে পারছেন না কৃষকরা’ এই মর্মে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। কারণ হাওরের পানি নামছে না। যদিও বছরের এই সময়ে প্রাকৃতিক নিয়মানুসারে পানি নেমে যাওয়ার কথা। কিন্তু পাউবোর ‘পরিকল্পিত বাঁধ’ হাওরের পানি নামতে দিচ্ছে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে বাঁধ কেটে দেওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করে কৃষকরা বাঁধ কেটে দিয়েছেন। এই অপরাধে এক কৃষকের কারাদ- হয়েছে। কিন্তু অভিজ্ঞমহলের অভিমত এই যে, অপরাধ যদি হয়ে থাকে তবে সে-অপরাধ মহালিয়া পাড়ের সকল কৃষকের ঘাড়েই বর্তায়, তাহলে একজন কৃষককে কেন কারাদ- দেওয়া হলো? সকল কৃষককে নয় কেন?
এক কৃষককে করাদ- প্রদানের পাশাপাশি পাউবো কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বাঁধ পুনরায় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে তাহিরপুর উপজেলার মহালিয়া হাওরে।
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, “পানি নিষ্কাশনের জন্য কৃষকদের কেটে দেয়া বাঁধে পুনরায় মাটি দিয়ে পানি আটকাচ্ছেন পাউবোর লোকজন। মহালিয়া হাওরে পানি
নিষ্কাশন না হওয়ায় বীজ ধান বপন করতে পারছেন না হাওরপাড়ের কৃষকরা।” অন্যত্র লেখা হয়েছে, “জামালগঞ্জ উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জনি বলেন, হাওরের পানি নিষ্কাশন করতে হলে ইউএনও অফিসে আবেদন করতে হবে।
আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্তক্রমে পরবর্তীতে সিদ্ধান্তক্রমে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে। জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুশফিকীন নূর বলেন, হাওরের পানি নিষ্কাশন করতে হলে কৃষকদের পক্ষ থেকে তাঁর কার্যালয়ে আবেদন করতে হবে। আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্তক্রমে বাঁধ কাটার ব্যবস্থা করা হবে।”
যেখানে হাওরের বাস্তবতা হলো পানি আটকে দিলে হাওরে বীজ বপন করা যাবে না এবং পরিণতিতে হাওরে ধানচাষ করা যাবে না, সেখানে প্রশাসন পানি নিষ্কাশনের জন্যে কাটা বাঁধ পুনরায় বেঁধে দিয়ে পানি আটকে দিয়ে প্রকারান্তরে হাওরে ‘ধানচাষ করা যাবে না’ এরকম একটি নির্দেশ জারি করেছেন এবং মহালিয়ার হাওরপাড়ের কৃষকদেরকে বলে দিয়েছেন : হাওরে ধানচাষ না হলে তাতে পাউবোর কীছু যায় আসে না, পাউবোর লক্ষ্য ‘ফসলরক্ষাবাঁধ’ রক্ষা করা, সে-বাঁধ যে-হাওরে দেওয়া হয়েছে সে-হাওরে ধান চাষ না হলেও চলবে, ধানচাষ নিয়ে পাউবো’র কোনও মাথা ব্যথা নেই। সব কথার শেষ কথা পাউবোর দেওয়া বাঁধ কাটা যাবে না, এটাই সই, এটাই অলঙ্ঘনীয় নিয়ম। সেটা যদি প্রকৃতির নিয়মকে লঙ্ঘন করে কিংবা ধানচাষ বন্ধ করে দেয় তা হলেও।
এমন হলে সর্বসাকুল্যে বিষয়টা এখন এই দাঁড়ালো যে, পাউবো ও উপজেলা কর্মকর্তাদের ধানের কোনও দরকার নেই, এই দেশে ধান না ফললেও তাঁদের চলবে, তাঁরা হাওরে ফসল ফলানো বা ফসল রক্ষার কাজে নিয়োজিত নন, তাঁরা কেবল পাউবো নির্মিত বাঁধ রক্ষারজন্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত। তাঁরা চোখ বুজে বাঁধ রক্ষা করবেন এবং তাদের অনুমতি ভিন্ন কোনও হাওরের পানি নামতে পারবে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা আইনি কর্তৃপক্ষের সহায়তা সব পাবে পাউবো ও পাউবোর ‘পরিকল্পিত বাঁধ’। তাঁদের বিবেচনায় হাওরে ধানচাষ ব্যাহত হওয়া, প্রাকৃতিক নিয়মে সময় মতো হাওরের পানি নিষ্কাশনের নিয়মে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি কোনও গুরুত্ব পাবে না। প্রকারান্তরে হাওর ও হাওরের প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করবে উপজেলা প্রশাসনের কোনও এক কর্মকর্তার মর্জি ।
এই হলো প্রশাসনিক ব্যবস্থার অবস্থা, অনেকটাই বাস্তবতার ধার না ধারতে অপারগ ‘রোবোটিকীয়’ রকমের অপরিণামদর্শী, বিচারবর্জিত ও একদেশদর্শিতায় নিমগ্ন।
অন্তত হাওরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আচরণের মর্মার্থ এমন বাস্তবতাবিবর্জিত প্রশাসনিক বাস্তবতাকেই প্রকটিত করে। হাওরবাসী এবংবিধ হাওরারি (হাওরের অরি অর্থাৎ শত্রু) প্রশাসনের পরিবর্তন প্রত্যাশা করেন, তাঁদের দরকার হাওরবান্ধব প্রশাসন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ